রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে গুরত্বপুর্ণ কিছু তথ্য ও প্রশ্ন একসাথে জেনে নিন।

যেকোন প্রতিযোগিতামূলক পরিক্ষার জন্য সাম্প্রতিক প্রশ্নঃ রোহিঙ্গারা পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটের উত্তরাংশে বসবাসকারী একটি জনগোষ্ঠী। অধিকাংশ রোহিঙ্গা ইসলাম ধর্মের অনুসারি তবে কিছু সংখ্যক হিন্দু ধর্মের অনুসারিও রয়েছে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেছে। রাখাইন স্টেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হলো রোহিঙ্গা। সংখ্যায় প্রায় ২০ লাখ। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও উগ্র রাখাইনদের সাম্প্রদায়িক আক্রমণের শিকার হয়ে প্রায় ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। প্রাথমিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যীয় মুসলমান ও স্থানীয় আরাকানিদের সংমিশ্রণে রোহিঙ্গা জাতির উদ্ভব। পরবর্তী সময়ে চাটগাঁইয়া, রাখাইন, আরাকানি, বার্মিজ, বাঙালি, ভারতীয়, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষের মিশ্রণে এই জাতি ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতাব্দীতে পূর্ণাঙ্গ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রোহিঙ্গাদের বসবাসস্থল রাখাইন রাজ্য। এর আদি নাম আরাকান। এ নামকরণ প্রমাণ করে মুসলিম ঐতিহ্যের কথা। কারণ ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তিকে একত্রে বলা হয় আরকান। আর এই আরকান থেকেই তার অনুসারী মুসলমানদের আবাস ভূমির নামকরণ করা হয়েছে আরাকান। ধারণা করা হয়, রোহিঙ্গা নামটি এসেছে আরাকানের রাজধানীর নাম ম্রোহং থেকে : ম্রোহং>রোয়াং>রোয়াইঙ্গিয়া>রোহিঙ্গা। তবে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে আরাকানের উল্লেখ রয়েছে রোসাং নামে।

তাদের ভাষা নিয়ে কিছু কথাঃ 

মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের (রাখাইন) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আধুনিক লিখিত ভাষাই হল রোহিঙ্গা ভাষা। এটি ইন্দো-ইউরোপীয়ান ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত যার সাথে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার মিল রয়েছে। রোহিঙ্গা গবেষকগণ আরবি, হানিফি, উর্দু, রোমান এবং বার্মিজ স্ক্রীপ্ট ব্যবহার করে সফলতার সাথে রোহিঙ্গা ভাষা লিখতে সক্ষম হয়েছেন। হানিফি হচ্ছে নতন তৈরি করা স্ক্রীপ্ট যা আরবি এবং তার সাথে চারটি বর্ণ (ল্যাটিন এবং বার্মিজ) সংযোগে সৃষ্ট। সম্প্রতি একটি ল্যাটিন স্ক্রীপ্টের উদ্ভাবন হয়েছে যা ২৬টি ইংরেজি বর্ণ এবং অতিরিক্ত ২টি ল্যাটিন বর্ণ, Ç (তাড়নজাত R -এর জন্য) এবং Ñ (নাসিকা ধ্বনি-র জন্য) সংযোগে সৃষ্ট। রোহিঙ্গা ধ্বনি সঠিকভাবে বোঝার জন্য ৫টি স্বরধ্বনি (áéíóú) ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি আই.এস.ও দ্বারা স্বীকৃত।

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও শরণার্থীঃ 

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বলা হয়  “বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু”। ১৫ অক্টেবর  ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের ফলে তারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হন। তারা সরকারি অনুমতি ছাড়া ভ্রমণ করতে পারে না, জমির মালিক হতে পারে না এবং দুইটির বেশি সন্তান না নেওয়ার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হয়। তাদেরকে জোড়পূর্বক শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানো হয়। সাধারণত তাদের সপ্তাহে একদিন করে বাধ্যতামূরকভাবে সেনাবাহিনী অথবা সরকারি প্রকল্পে এবং সপ্তাহে একদিন প্রহরী হিসেবে কাজ করতে হয়। এছাড়াও সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অনেক আবাদী জমি জোড়পূর্বক দখল করে সেখানকার বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীকে অথবা মায়নমারের অন্য স্থানের বৌদ্ধদেরকে দিয়েছে।

বিসিএস সহ সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ও সফল ব্যাক্তিদের পরামর্শ পেতে এখনই Join করুন আমাদের Official ফেসবুক Group “বিসিএস বুলেটিন” এ।

এখন আসুন সংক্ষেপে রোহিঙ্গা সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জেনে নিই।

প্রশ্ন ১: রোহিঙ্গা কারা? ➩ উত্তর: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি জাতিগোষ্ঠী।

প্রশ্ন ২: আরাকানের প্রাচীন নাম কী-? ➩ উঃ রাখাইন।
প্রশ্ন ৩: রাখাইন শব্দের অর্থ কী-?➩ উঃ রাক্ষসদের আবাসভূমি।(অস্ট্রিকদের রাক্ষস বলে চিহ্নিত করা হয়েছে)।
প্রশ্ন ৪: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কবে বার্মা দখল করে-? ➩ উঃ ১৮২৪ সালে।
প্রশ্ন ৫: কবে আরাকান রাজ্যর নাম পরিবর্তন করে “রাখাইন” নাম করণ করা হয়-? ➩ উঃ ১৯৮১।
প্রশ্ন ৬: বিশ্বের রাষ্ট্রবিহীন সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রগোষ্ঠীর নাম কী-? ➩ উঃ রোহিঙ্গা।
প্রশ্ন ৭: কতসালে প্রথম বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আসা শুরু করে-? ➩ উঃ ১৯৭৮।
প্রশ্ন ৮: অপারেশন নাগামিন/ কিং ড্রাগন পরিচালিত করে কারা-? ➩ উঃ মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
প্রশ্ন ৯: কবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্য শরণার্থী প্রত্যর্পণ চুক্তি সাক্ষরিত হয়-? ➩ উঃ ৯ জুলাই ১৯৭৮।
প্রশ্ন ১০: “অপারেশন পিয়ে থার” পরিচালিত করে কারা-? ➩ উঃ মিয়ানমার সরকার বাহিনী।
প্রশ্ন ১১: কবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্য সমঝোতা চুক্তি সাক্ষরিত হয়-? ➩ উঃ ২৮ এপ্রিল ১৯৯২।
প্রশ্ন ১২: কবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন শুরু হয়-? ➩ উঃ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭।(রুবিয়া খাতুন প্রথম নিবন্ধিত ব্যাক্তি)।
প্রশ্ন ১৩:”অপারেশন ক্লিয়ারেন্স” পরিচালিত করে কারা-? ➩ উঃ মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
প্রশ্ন ১৪: “Three all policy” যুদ্ধ-কৌশলের মূল নীতি কি-? ➩ উঃ সবাইকে হত্যা করো, সবকিছু পুড়িয়ে দাও, সবকিছু লুট করো।
প্রশ্ন ১৫: “৯৬৯” কোন দেশের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী -? ➩ উঃ মিয়ানমার।
প্রশ্ন ১৬: মিয়ানমারের লাদেন বলা হয় কাকে-? ➩ উঃ বৌদ্ধ ধর্মগুরু উইরাথু।
প্রশ্ন ১৭: মিয়ানমারের সেনাবাহিনীদের স্থানীয় কী নামে ডাকা হয়-? ➩ উঃ টাটামাডো।
প্রশ্ন ১৮: মিয়ানমার কত সালে স্বাধীনতা লাভ করে-? ➩ উঃ ১৯৪৮
প্রশ্ন ১৯:রোহিঙ্গাদের নিয়ে নির্মিত চলচিত্রের নাম কী-? ➩ উঃ The Floating Man.
প্রশ্ন ২০: “The Floating Man” চলচিত্রের নির্মাতা কে-? ➩ উঃ সৈয়দ জুবায়ের আহমেদ।
প্রশ্ন ২১: কবে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ ঘোষণা করে মিয়ানমার সরকার-? ➩ উঃ ২০০৫।

প্রশ্ন ২২: বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত প্রথম রোহিঙ্গা নারী? ➩ উত্তর : রুবিয়া খাতুন।

প্রশ্ন ২৩: বাংলাদেশে প্রথম রোহিঙ্গা প্রবেশ করে:- ➩ উত্তর :১৯৭৮ সালে।

প্রশ্ন ২৪:  বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে নির্যাতিত সম্প্রদায়- ➩ উত্তর : রোহিঙ্গা সম্প্রদায়।
প্রশ্ন ২৫: রোহিঙ্গাদের জন্মগত অধিকারই অস্বীকার করা হয়– ➩ উত্তর: ১৫ অক্টেবর ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here