বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং আজ (১৪/০৩/২০১৮) বুধবার মারা গেছেন। গত ৮ জানুয়ারি ছিল তাঁর ৭৬তম জন্মবার্ষিকী। বিজ্ঞানের দুনিয়ায় সবচেয়ে পরিচিত মুখ হকিংয়ের গবেষণা ও কাজ কয়েক দশক ধরেই মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আসুন স্টিফেন হকিংয়ের কিছু অজানা তথ্য জেনে নিই।
🎯 ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন হকিং। বেড়ে ওঠেন সেন্ট আলবানসে। চার ভাইবোনের মধ্যে বড় ছিলেন। হকিংয়ের বাবা ফ্র্যাঙ্ক হকিং ছিলেন জীববিজ্ঞানের গবেষক। মা ইসাবেল হকিং রাজনৈতিক কর্মী। বাবা চেয়েছিলেন, হকিং বড় হয়ে চিকিৎসক হোক। ছেলেবেলা থেকেই হকিংয়ের আগ্রহ বিজ্ঞান আর গণিতে। তাঁর জন্মদিনের তারিখ আরেক বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলির ৩০০তম মৃত্যুবার্ষিকী।
🎯 ১৯৫৯ সালে ১৭ বছর বয়সে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন হকিং। চেয়েছিলেন গণিতে পড়তে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত পড়ার সুযোগ না থাকায় পদার্থবিজ্ঞান পড়েন। তিনি প্রথম বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
দেখে আসুন:- স্টিফেন হকিং ও তার সকল বই পরিচিতি
🎯 হকিংয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রির সংখ্যা এক ডজন। ১৯৮২ সালে সিবিই অর্জন করেন। রয়্যাল সোসাইটির ফেলো ও ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের সদস্য তিনি।
🎯 হকিং ২১ বছর বয়স থেকে অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস (এএলএস) রোগে ভুগছিলেন। এ রোগ খুব কম দেখা যায়। এটি খুব ধীরে ধীরে মানুষকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে ফেলে।
🎯 ১৯৮৫ সালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তাঁর ভোকাল কর্ড ও ল্যারিংস নষ্ট হয়। এতে কি-বোর্ড চালিত ইলেকট্রনিক স্পিচ সিনথেইজার তাঁর হুইলচেয়ারে বসানো হয়।
🎯 ১৯৮৮ সালে তাঁর লেখা ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইটি সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের একটি। ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর ও আপেক্ষিকতা নিয়ে গবেষণার জন্য বিখ্যাত ছিলেন ব্রিটিশ এই পদার্থবিদ। চার বছরের বেশি সময় ধরে সানডে টাইমসের সেরা বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকার শীর্ষে ছিল এটি।
🎯 ২৫ বছরের বিবাহিত জীবনে তিন সন্তানের জনক হকিং। জেন হকিংয়ের সঙ্গে ১৯৯৫ সালে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাঁর। পরে নার্স এলাইন মেসনকে বিয়ে করেন।
🎯 আইনস্টাইনের পর হকিংকে বিখ্যাত পদার্থবিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। হকিংয়ের নামানুসারে এক কণাস্রোতের নাম দেওয়া হয়েছে হকিং বিকিরণ।
🎯 হকিং ও তাঁর মেয়ে লুসি হকিং মিলে ২০০৭ সালে শিশুদের জন্য জনপ্রিয় বই ‘জর্জ’স সিক্রেট কি টু দ্য ইউনিভার্স’ লেখেন। এর তিনটি সিক্যুয়াল রয়েছে।
🎯 ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পুরস্কারে ভূষিত করেন।
বিসিএস সহ সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ও সফল ব্যাক্তিদের পরামর্শ পেতে এখনই Join করুন আমাদের Official ফেসবুক Group “বিসিএস বুলেটিন” এ।
তিনি বলতেন, ‘‘Life would be tragic if it weren’t funny’’। অর্থাৎ, জীবনে মজা না থাকলে তা দুঃখে পরিণত হয়।
🎯 জ্যোতির্বিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলির ৩০০ তম মৃত্যু দিবসে জন্ম হয় স্টিফেন হকিং-এর। তাঁর জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি। আর গ্যালিলিও মারা গিয়েছিলেন ১৬৪২ সালের ৮ জানুয়ারি।
🎯 যখন তার বয়স ছিল নয় বছর তখন হকিং ছিলেন ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ ছাত্র। অর্থাৎ মেধাক্রমের দিক থেকে সবার পেছনে।
🎯 যদিও পরীক্ষায় কম নাম্বার পেতেন তবুও তাঁর বুদ্ধির তীব্রতায় শিক্ষকদের কাছে ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়। বিজ্ঞান সম্পর্কে আগ্রহের কারণে শিক্ষক আর বন্ধুরা আদর করে ডাকতেন আইনস্টাইন।
🎯 অক্সফোর্ডে ভর্তির আগে পছন্দ করতেন নৌকা চালাতে ও ঘোড়া দাবড়িয়ে বেড়াতে।
🎯 ১৯৬৫ সালে জেইন ওয়াইল্ডকে বিয়ে করেন হকিং। তাদের সংসারে তিনটি সন্তান রয়েছে। ৩০ বছরের বৈবাহিক জীবন শেষ হয় বিবাহ বিচ্ছেদের মাধ্যমে। এরপর তিনি আবারও বিয়ে করেন তার সাবেক নার্স এলেইন ম্যাসনকে। তবে এ সম্পর্কটিও ভেঙ্গে যায়।
🎯 ডাক্তাররা ১৯৬৪ সালেই ঘোষণা করেছিলেন তিনি আর বড়জোর দুই-তিন বছর বাঁচবেন। কিন্তু তাদের মুখে চুনকালি মেখে তিনি বেঁচে ছিলেন ২০১৮ সাল অবধি।
🎯 ১৯৭৪ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি ব্রিটেনের সবচেয়ে সম্মানজনক রয়েল সোসাইটি অব সায়েন্সের কনিষ্ঠতম ফেলো হন।
🎯 টেলিভিশনের পর্দায় হকিংকে দেখা যেত মাঝে মাঝেই। তিনি প্রায়ই তার ভয়েস সিনথেসাইজার দিয়ে বলা কণ্ঠে ক্যামিও হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন ‘দ্য সিম্পসনস’, ‘দ্য বিগ ব্যাংগ থিওরি’ ও ‘স্টার ট্রেক: দ্য নেক্সট জেনারেশন’ নামের জনপ্রিয় আমেরিকান সিটকম গুলোতে। এছাড়া আমেরিকার বিখ্যাত টকশোসহ বেশ কিছু ডকুমেন্টারিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
🎯 ২০০৭ সালে স্টিফেন হকিং তার মেয়ে লুসি হকিং এর সঙ্গে মিলে লিখেছিলেন ছোটদের বই ‘জর্জস সিক্রেট কি টু দ্য ইউনিভার্স’। যা জর্জ নামের ছোট বালকের কাহিনী। কিন্তু সেখানে রয়েছে ব্ল্যাকহোল, বিগ ব্যাংগ থিওরিসহ নানা বৈজ্ঞানিক ধারণার সহজ বিশ্লেষণ।
🎯 ২০১৬ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স রিসার্চ সেন্টারের উদ্বোধনকালে হকিং বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্ভবত মানব সভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, এর মাধ্যমে সারা পৃথিবী থেকে রোগ এবং দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে। তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র ও দরিদ্র মানুষকে ঠকানোর নতুন পদ্ধতিও তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।
🎯 তিনি যে মটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে হুইলচেয়ারে বসা ছিলেন, সেই দুরারোগ্য ব্যাধিটির নাম অ্যামিওট্রফিক ল্যাটারাল স্লেরোসিস।
🎯 ২০১৪ সালে স্টিফেন হকিং ও তার প্রথম স্ত্রী জেইন ওয়াইল্ডের প্রেমকাহিনী নিয়ে বানানো হয় চলচ্চিত্র ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’। তার চরিত্রে অভিনয় করা ব্রিটিশ অভিনেতা এডি রেডমেইন ২০১৪ সালে সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার জেতেন। সিনেমাটির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন স্টিফেন হকিং। ১৩. ২০০৭ সালে তিনি পৃথিবীর প্রথম প্যারালাইজড ব্যক্তি হিসেবে ‘জিরো গ্র্যাভিটি’তে ভেসেছিলেন। নাসার কেনেডি ফ্লাইট স্টেশনের একটি বিশেষ বিমানে চড়ে তিনি এ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন।